আজকের পোস্ট এসব বিষয় নিয়ে। হাতেকলমে কোনো কিছু দেখাতে না পারলেও ওইসব ব্যাপারে কিছু তথ্য উপস্থাপনের চেষ্টা করব।
কোনো বস্তুকে পুড়িয়ে ফেলতে এসিড কতটা ক্ষমতাধর- তা কারও অজানা নয়। তবে প্লাস্টিকের কাছে হার মানতে বাধ্য এসিড। তাহলে তো প্লাস্টিক দিয়েই মোটর বাইকের ডিস্ক লক বানালে হতো।
তাই না?
কিন্তু এটা কী কোনো কথা?
প্লাস্টিক দিয়ে কোনো ডিস্ক লক বানানো সম্ভব না। যদি কোনো কোম্পানি বানায়ও তাহলে সেটাকে তো চোর মহাশয় কুটুস করে ধারালো কিছু দিয়ে কেটে ফেলবে নিমিষেই। তাহলে ঘটনা কী দাঁড়ালো? এসিড প্লাস্টিকের কাছে হার মানলেও চোর প্লাস্টিককে বাহাদুরের বেশে জয় করে নিতে সক্ষম।
ওদিকে, এসিড কিন্তু লোহার যম। যে লোহাকে কাটতে, ভাংতে, বাঁকাতে এতো এতো মেশিন, হাতুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে; সেখানে ঘন এসিড লোহাকে নিমিষেই গলিয়ে ফেলার মতন সক্ষমতা রাখে- এটা কারও অজানা নয়।
এই যে বাজারে ডিস্ক লক বলি আর মোটর বাইকের সুরক্ষার জন অন্য রকমের চাবিযুক্ত তালা বলি- এর সবই কিন্তু লৌহজাত সামগ্রী দিয়েই তৈরি। সুতরাং এসিড দিয়ে মোটর বাইক চোরেরা নিমিষেই এসব তালা গলিয়ে নির্বিঘ্নে চুরি নামক কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে ফেলেন।
তবে কথা আছে। লোহার বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর একটি জাত স্টেইলনেস স্টিল। এই স্টেইলনেস স্টিলের কাছে কিন্তু এডিসকে হার মানানো সম্ভব। সাধারণ লোহার চেয়ে স্টেইলনেস স্টিল অনেক ব্যয়বহুল, টেকসই, মরিচা প্রতিরোধী। কিছু সাধারণ মানের স্টেইলনেস স্টিল এসিডে ক্ষয় প্রাপ্ত হলেও তা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
একই সাথে বলতে হচ্ছে, স্টেইলনেস স্টিল দিয়ে যদি কোনো ডিস্কলক বা মোটর বাইকের সুরক্ষার জন্য অন্য রকমের চাবিযুক্ত তালা বানানো হয়, তবে কোনো যন্তপাতির সাহায্যে সল্প সময়ের মধ্যে তা কেটে-ভেংগে চুরি নামক মহৎ কর্ম সম্পাদন করা চোরের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সাধারণ লোহার মতন এত সোজা না অসাধারণ লোহা স্টেইলনেস স্টিলকে কেটে-ভেংগে ফেলা।
তাহলে তো হলোই- ডিস্কলক বা মোটর বাইকের সুরক্ষার জন্য অন্য রকমের চাবিযুক্ত তালা অসাধারণ লোহা স্টেইলনেস স্টিল দিয়ে বানালেই হয়? তাহলেই তো এসিড এবং চোর উভয়ের পরাজয় শোচনীয়ভাবে ঘটবে?
হ্যাঁ, কথা কিন্তু সত্য।
বাজারে যেসব ডিস্ক লক বা মোটর বাইকের সুরক্ষার জন্য অন্য রকমের চাবিযুক্ত তালা পাওয়া যায়, যেগুলোকে বিক্রেতারা মুখভরে এসিডপুফ তালা হিসেবে দাবি করেন, এসবের মধে কিছু তালা আছে, যা অসাধারণ লোহা স্টেইলনেস স্টিল দিয়ে তৈরি। যেগুলো এসিড দিয়ে স্বল্প সময়ে গলিয়ে ফেলা চোরের পক্ষে অসম্ভব।
তবে এসব তালার বাইরের অংশ এসিডকে যতটা হারানোর নিশ্চিত ক্ষমতা রাখে, ততটা ক্ষমতা রাখে না লকের অংশটি অর্থাৎ যেখান দিয়ে চাবির সাহাযে তালা খোলা লাগানো হয়। এই অংশ বাইরের অংশের মতন বানাতে গেলে উৎপাদনকারীদের বিশাল খরচ চলে যাবে এব বিক্রয় মূল্যও কিন্তু বেড়ে যাবে।
তাহলে তো হলো না, অসাধারণ লোহা স্টেইলনেস স্টিল দিয়ে তৈরি তালার বাইরের অংশ না হয় এসিড কে হারিয়ে দিলো, কিন্তু ওই লকের অংশটি অর্থাৎ যেখান দিয়ে চাবির সাহায্যে তালা খোলা লাগানো হয়- এটা তো স্বল্প সময়ে এসিডে গলে যাবে? তাই না?
হাঁ, গলে যাবে, কথা সত্য। তবে আশার কথা হচ্ছে সব তালা নয়। বাংলাদেশের বাজারে এমন কিছু ব্র্যান্ডের ডিস্ক লক বা মোটর বাইকের সুরক্ষার জন্য অন্য রকমের চাবিযুক্ত তালা পাওয়া যাচ্ছে, যার বাইরের অংশটিও যেমনি এসিডকে হারাতে সক্ষম, তেমনি লকের অংশটি (যেখান দিয়ে চাবির সাহায্যে তালা খোলা লাগানো হয়) এসিডকে হারাতে সক্ষম। এসব তালার দাম সেইরকম হলেও সুরক্ষা বেশি।
কিন্তু একজন সাধারণ কেতা কিভাবে বুঝবেন যে, কোন তালাগুলোর ওই ধরণের বৈশিষ্ট আছে? সাধারণ ক্রেতারা তো জনে জনে পদার্থ-রসায়ন বিজ্ঞানের ছাত্র বা বিজ্ঞানী নয়, যে তারা তাদের জ্ঞানের জোরে ওইসব বৈশিষ্ট বুঝতে পারবেন? কিংবা সাধারণ ক্রেতাদের কাছে এমন কোনো যন্ত্রও নেই, যেটা দিয়ে বুঝে যাবেন যে, কোন তালায় ওইসব বৈশিষ্টগুলো আছে?
এবার এর উত্তর দিচ্ছি, কীভাবে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে ওইসব বৈশিষ্টযুক্ত তালা খুব চেনা সম্ভব।
লোহায় চৌম্বকীয় শক্তি থাকে। কিন্তু সব লোহায় না। যেমন- অসাধারণ লোহা স্টেইলনেস স্টিল। খুব উচ্চমানের স্টেইলনেস স্টিলে চুম্বক আকর্ষণ করতে পারে না। কিছু মানের স্টিলে চুম্বক আকর্ষণ করে খুবই খুবই কম। তাহলে এসব তালা কেনার সময় যদি একটি চুম্বকের সাহায্য নেয়া হয়, তাহলেই কিন্তু হয়ে গেল।
দেখা যেতে পারে, দোকানদার যে তালাকে এন্টিএসিড বলে ক্রেতার হাতে দিলো, সেটার বাইরের অংশেও খুব ভালভাবে চুম্বক আকর্ষণ করল এবং চাবি লাগানোর অংশেও খুব ভালভাবে চুম্বক আকর্ষণ করল। এমন যদি হয়, তাহলে এটা কোনোভাবেই এসিড প্রুফ তালা নয়।
যদি দেখা যায়, দোকানদার যে তালা দিলো, তার বাইরের ও চাবি লাগানোর অংশ চুম্বক আকর্ষণ করল না অথবা খুব খুব কম আকর্ষণ করল- এমন যদি হয়, তাহলে এটাকে এন্টি এসিড তালা হিসেবে বলা যায়। তবে যেটাতে চুম্বক হালকা আকর্ষণ করবে, সেটা কিন্তু উচ্চমাত্রার এসিডের সাহায্যে গলিয়ে ফেলা সম্ভব, কিন্তু এতে প্রচুর সময় লাগবে, এতো সময় চোরেরা ব্যবহার করবে না। আর যেটার মধ্যে চুম্বক একেবারেই আকর্ষণ করে না, সেটার ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। পুরা মাখন।
তাহলে তো বোঝা গেল, বালাদেশে এন্টি এসিড তালা আছে কিনা, সেটাকে কিভাবে সহজে চেনা সম্ভব।
এবার বলছি দামের বাপারে। এন্টি এসিড তালা ব্র্যান্ড, আকার ও মানভেদে এক হাজার ৫০০, থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার তালা দেখেছি। এর চেয়েও দামি হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায়। আমি কোনো ব্র্যান্ড সাজেস্ট করব না। কিন্তু কিভাবে এসিড প্রুফ তালা চেনা সম্ভব, সেটা কিন্তু বলে দিয়েছি। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কৌশল। এটা প্রয়োগ করলে আর কিছু দরকার আছে বলে মনে হয় না।
যা হোক, শেষ করছি আজকের পোস্ট। মোটর বাইকের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতকর্তা পালন করুন।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শেয়ার করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সমর্থন করবেন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thanks For Comment.