Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ট্যাপেট এডজাস্টমেন্ট বা ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কিছু কথা (পর্ব-১)


ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স একটা বাইকের পারফর্মেন্সের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং খুব সুক্ষ জিনিস। কিন্তু এ সম্পর্কে আমাদের দেশে বেশিরভাগ মিস্ত্রিদের ধারণা খুবই কম এবং এই অত্যন্ত সুক্ষ্ম  কাজ হাতের আন্দাজে করে থাকেন অভিজ্ঞতার আলোকে। কিন্তু ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স এতোটাই সুক্ষ ব্যাপার যে, দুনিয়ার সেরা টেকনিশিয়ানের পক্ষেও খালি হাতে, হাতের আন্দাজে নির্ভুলভাবে সঠিকভাবে ম্যানুয়াল প্রদত্ত ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স সেট করা সম্ভব নাহ। যার কারণে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হন রাইডাররা। তবে কিছু মটরসাইকেল ওয়ার্কশপে টেকনিশিয়ানরা সচেতন হচ্ছেন এবং স্মার্টলি এটা নিয়ম মেনে এডজাস্ট করেন। এটা খুবই ইতিবাচক পরিবর্তন। আশা করি- অচিরেই এই ক্ষেত্রে সব ওয়ার্কশপ সচেতন হবে।

 এই পোস্টে ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স কী, কিভাবে মোটর সাইকেল  প্রস্তুতকারী ইঞ্জিনিয়াররা সেট করেন, ট্যাপেট এডজাস্টমেন্ট কী, বাংলাদেশে এর ভুল প্রয়োগ, ভুল ট্যাপেট এডজাস্টমেন্টের কারণে কী ধরণের ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয় এবং কী রকম সমস্যা ফেইস করেন বাইকাররা, কিভাবে ট্যাপেট এডজাস্ট করতে হয় এবং বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন বেশকিছু বাইকের ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স চার্ট সম্পর্কে জানব।

 

বিষয়টি বিশাল বড়। তাই এটিকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। আজ পড়ুন প্রথম পর্ব।

 

* ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স কী?

 

তার আগে ইঞ্জিন হেড এর কিছু ব্যাপার জেনে নিই। (এখানে সিঙ্গেল হেড, ২ ভাল্ব যুক্ত সিঙ্গেল ওভার হেড ক্যাম ইঞ্জিন (SOHC) ইঞ্জিন নিয়ে আলোচনা করব)।

৪ স্ট্রোক ইঞ্জিনের ফুয়েল এবং এয়ার ঢুকার জন্যে Inlet Valve এবং কমবাস্ট হওয়ার পর উত্তপ্ত গ্যাস বের হওয়ার জন্যে Outlet valve থাকে। ক্র‍্যানক এর সাথে ইঞ্জিন হেডে ক্যাম (Cam ) টাইমিং চেইন দিয়ে যুক্ত থাকে ক্যাম স্প্রোকেটের সাথে। ক্যাম শ্যাফট এ দুইটা ট্যাপেট (Tappet) লোব থাকে। যা ঘুরার সময় রকার আর্মকে (Rocker arm) ধাক্কা দেয়। রকার আর্ম তখন ভাল্বকে ধাক্কা দেয় এবং ভাল্ব তখন নিচের দিকে চলে আসে। এই সিস্টেমেই ইনলেট-আউটলেট ভাল্ব খুলে যায় এবং এয়ার ফুয়েল ইনটেক ভাল্ব দিয়ে ঢুকে আর আউটলেট ভাল্ব দিয়ে কমবাস্ট গ্যাস বের হয়।

 এই রকার আর্ম এবং ভাল্ব এর মধ্যে অত্যন্ত সুক্ষ একটা গ্যাপ রক্ষা করা হয়। এই গ্যাপকেই ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স বলে। অর্থাৎ রকার আর্ম থেকে ভাল্ব কতটুকু গ্যাপ বা ক্লিয়ার হয়ে আছে, সেটাই ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স। 


*  ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স কেন রাখা হয় এবং কিভাবে একটা নতুন ইঞ্জিন ডেভেলপ হওয়ার সময় ম্যানুফ্যাকচারার এটা সেট করেন?

সাধারণত যখন ইঞ্জিন গরম হয় তখন তার তাপমাত্রা হয় ৯০-১১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (হাই পার্ফরমেন্স এন্ড হাই সিসি বাইকে আরো বেশি উঠে)। এভারেজ আমরা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরতে পারি,যা অত্যন্ত উচ্চ তাপমত্রা। তাপের কারণে পদার্থের দৈর্ঘ্য ,প্রস্থ, আয়তন সব কিছু বাড়ে । যেহেতু, ভাল্ব একটি লম্বা টাইপ পার্টস, তাই অত্যধিক তাপের ভাল্ব ধাতুর প্রসারণ হলে এর দৈর্ঘ্য প্রসারণ বেশি হবে। তাই পরিবেশের তাপমাত্রা (avg 30 degree)তে ভাল্বের দৈর্ঘ্য যা থাকবে, ইঞ্জিন যখন গরম হয়ে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যাবে, তখন নিশ্চয়ই তা থাকবে নাহ। খুব সূক্ষ্ম পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

ধরুন, যদি ঠাণ্ডা অবস্থায় কোনো ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স না রেখে ফ্লাই হুইলের TDC (top dead centre) তে রেখে একদম রকারের সাথে ভাল্ব লাগিয়ে রাখা হয়। তাহলে ইঞ্জিন যখন গরম হবে তখন ভাল্বের দৈর্ঘ্য, ভাল্ব পদার্থের দৈর্ঘ্য প্রসারঙ্ক অনুযায়ী বৃদ্ধির কারণে ভাল্ব রকারকে উপরদিকে পুশ করবে লম্বা হবার কারণে। কিন্তু রকার তো উপরের দিকে উঠতে পারে নাহ। কারন TDC পজিশনে। তাই ভাল্ব নিজে নিচের দিকে চলে আসে এবং ভাল্ব যেই সুক্ষ্ম পরিমাণ লম্বা হয়, সেই পরিমাণ ভাল্ব ওপেন হয়ে থাকে। যখন ভাল্ব পুরাপুরি বন্ধ থাকা প্রয়োজন, তখন বন্ধ না হয়ে সেই সুক্ষ্ম পরিমাণ খুলে থাকে। তাই কম্প্রেসন ফল করে ইঞ্জিন গুরুতর সমস্যা শুরু  করবে। তাই এই দৈর্ঘ্য প্রসারণকে প্রাধান্য দিয়ে ভাল্বে গ্যাপ রাখা হয়, যাতে ভাল্ব গরম হয়ে লম্বা হলেও তা যেন ভাল্ব ওপেন না করে।

একটা উদাহারণ দিই। ধরুন, আপনার ছোট্ট ছেলের জন্যে একটা ছোট্ট খাট বানালেন। একদম তার মাপ অনুযায়ী। সে যখন ঘুমায়,তখন তার মাথা খাটের উপরের সাইডের কাঠে লেগে থাকে এবং পা থাকে একদম খাটের কিনারে। ৩ বছর পর  দেখলেন আপনার ছেলে লম্বা হয়ে গেছে। এখন সে ঘুমালে তার পা খাট থেকে বের হয়ে থাকে। খাট বানানোর সময় যদি ৩ বছর পর ছেলে কতটুকু লম্বা হতে পারে, এটা ভেবে একটু লম্বা খাট বানাতেন,তাহলে এখন এই সমস্যা হতো নাহ।

 

এজন্যে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা কিছু জিনিসের উপর ভিত্তি করে ভাল্ব গ্যাপ নির্ধারণ করেন। তা হলোঃ-

১। তাপমাত্রা : এটা প্রধান বিষয়। একটা ইঞ্জিনে সর্বোচ্চ কত তাপমাত্রা উঠে (ওভার হিট হলেও কত উঠে)। তার উপর ভিত্তি করে সেই তাপমাত্রায় ভাল্ব কতটুকু দৈর্ঘ্য প্রসারণ করে, তা বের করা হয়। ইনটেক ভাল্ব দিয়ে বাতাস এবং ফুয়েল ঢুকে পেট্রোল ইঞ্জিনে, যা শীতল বা পরিবেশের তাপমাত্রায় থাকে। তাই ইনটেক ভাল্ব ধাতু কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু আউটলেট বা এগজস্ট ভাল্ব দিয়ে অত্যন্ত উত্তপ্ত কমবাস্ট গ্যাস বের হয়। তাই সব সময় ইনটেক ভাল্ব এর চেয়ে আউটলেট ভাল্ব অনেক বেশি তাপমাত্রায় থাকে এবং এর দৈর্ঘ্য প্রসারণ বেশি ঘটে ইনটেক ভাল্ব এর চেয়ে। তাই বেশিরভাগ সময় দেখবেন, মোটর সাইকেলের আউটলেট ভাল্ব এর ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স ইনলেট ভালভ থেকে ৯৫% ক্ষেত্রে বেশি হয়।বেশি হয়।

২। পদার্থ দিয়ে দিয়ে ভাল্ব বানানো তার দৈর্ঘ্য প্রসারঙ্ক : ভাল্ব অত্যন্ত তাপ সহিষ্ণু সংকর ধাতু দিয়ে বানানো হয়। এক এক ধাতুর দৈর্ঘ্য প্রসারণ এক এক রকম। তাই কী ধরণের সঙ্কর ধাতু দিয়ে ভাল্ব বানানো হচ্ছে,তার উপর ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স নির্ভর করে। তাই একই ইঞ্জিনে যদি অন্য ধরণের ধাতু দিয়ে ভাল্ব বানানো হয়, তাহলে ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স অন্য রকম হবে এবং নতুন করে হিসাব করতে হবে।

৩। ভাল্বের দৈর্ঘ্য : ভাল্ব আকারে যত লম্বা হবে,তার ক্লিয়ারেন্স তত বেশি হবে। কারণ তাপে ধাতুর দৈর্ঘ্য প্রসারণ তার দৈর্ঘ্য এর সমানুপাতিক। বড় ইঞ্জিন যেমন বাস, ট্রাক এর ইঞ্জিন এর ভাল্ব লম্বা থাকে, তাই ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স বেশি থাকে। আবার ছোট ইঞ্জিন যেমন মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের ভাল্ব দৈর্ঘ্য ছোট থাকে। তাই ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স কম থাকে।

উল্লেখিত বিষয়গুলো একত্রে বিচার করে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়াররা একটা নতুন ইঞ্জিন বানানোর সময় ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স নির্ণয় করে ম্যানুয়ালে লিখে দেন। ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। যেখানে পরিবেশের তাপমাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোটর সাইকেলের বড় বড় উৎপাদকরা একটা সীমানার ভিতর গ্যাপ বলে দেয় (For example, in Suzuki Gixxer, Intake valve clearance is 0.04-0.08mm)। বিশ্বের সব জায়গায় যাতে এডজাস্ট করা যায়। গরম আবহাওয়া দেশে গ্যাপ বেশি রাখতে হবে সীমার ভিতর রেখে । তাই বুঝতেই পেরেছেন, এটা কোনও অবহেলা বা হাতের আন্দাজে এডজাস্ট করার মতো গ্যাপ নয় যে একটা রাখলেই হবে।

 

* ট্যাপেট এডজাস্টমেন্ট কী?

 

ফিলার গজ

রকার আর্ম এবং ভাল্ব এর মধ্যকার গ্যাপকে ম্যানুয়াল বইতে থাকা গ্যাপ অনুযায়ী ফিলার গজ দিয়ে এডজাস্ট করাকে ট্যাপেট এডজাস্টমেন্ট বা ট্যাপেট মিলানো বলে। ফিলার গজ একটা ব্লেড এর মতো পাত। বিভিন্ন পরিমাণ পুরুত্ব থাকে একটা ফিলার গজ সেটে।  পুরুত্বের পরিমাণ ব্লেডের উপর দেয়া থাকে। যা দিয়ে আমরা এই গ্যাপ ১০০% সঠিকভাবে মিলিয়ে নিতে পারি। এটা একটা মোটর সাইকেলের পিরিওডিক মেইন্টেনেন্স। কত কি.মি. পরপর এটা চেক করা উচিৎ, এটা ম্যানুয়ালে লিখে দেয়। দীর্ঘ সময় পর পর এই গ্যাপ একটু পরিবর্তন হয়। এই কারণে মোটর সাইকেলের পারফর্মেন্সে নেতিবাচক দিক আনে। অনেক সময়- ভাল্ব গ্যাপ জনিত সুনির্দিষ্ট সমস্যা দেখা দেয়। তখন এডজাস্ট করতে হয়।

 

* বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ট্যাপেট এডজাস্টমেন্ট নিয়ে কিছু কথা :

 

অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মিস্ত্রি খালি হাতে, হাতের আন্দাজে ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স সেট করেন। এমনকি জানেও না, এটার একটা নির্দিষ্ট মাপের গ্যাপ আছে, এমনকি ফিলার গজ নামের একটা জিনিস আছে, এটাই জানে না। ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স এর মাপ অত্যন্ত সূক্ষ্ম, (যেমন বাজাজ পালসার ১৫০ এর valve clearance Intake=0.05mm, Outlet  0.10mm). যা চোখের আন্দাজে বা হাতের আন্দাজে মিলানো দুনিয়ার কারো পক্ষেই সম্ভব না। দুনিয়ার সেরা মিস্ত্রি কে-ও যদি বলেন, গ্যাপ টা ০.০৮মিমি. রাখেন, তাইলেও সেটা ঠিক ০.০৮মিমি. রাখতে পারবে না। এটা অসম্ভব। যা মাপ দেখেই বুঝতে পেরেছেন। আর শুধু ফিলার গজ থাকলেই তো হবে না। সংশ্লিষ্ট মোটর সাইকেলের ভাল্ব গ্যাপ তো জানা থাকতে হবে। কারণ এক এক মোটর সাইকেলের এক এক রকম ভাল্ব গ্যাপ। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ওনার্স ম্যানুয়ালে ভাল্ব গ্যাপ লিখে দেয়া থাকে না। এটা শুধুমাত্র সার্ভিস ম্যানুয়ালে লিখে দেয়। যেটা শুধু সার্ভিস সেন্টারে থাকে। আরো দুঃখের ব্যাপার হলে- বাংলাদেশে বলতে গেলে বেশির ভাগ কোম্পানির সার্ভিস সেন্টারেও এই হাতের আন্দাজে মিস্ত্রিরা ট্যাপেট এডজাস্ট করে।

ফিলার গজের সাহায্যে ভাল্ব এডজাস্ট করা হচ্ছে

তাই ট্যাপেট এডজাস্টমেন্টে খালি হাতে মিলায় এমন মিস্ত্রির উপর ভরসা করা যাবে না। কিছু মোটর সাইকেল ব্রান্ডের নির্দিষ্ট কিছু সার্ভিস সেন্টারে ফিলার গজ দিয়ে সার্ভিস ম্যানুয়াল অনুযায়ী ট্যাপেট এডজাস্ট করে সেখানে যেতে হবে।


অনেক ভাল ভাল ওয়ার্কশপে ফিলার গজ দিয়ে ম্যানুয়াল প্রদত্ত গ্যাপ, একদম নিয়ম মেনে মেইন্টেইন করেন । সেইসব ওয়ার্কশপে এডজাস্ট করবেন। অথবা নিজে ফিলার গজ কিনে নিজের মোটর সাইকেলের ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস ম্যানুয়াল বা ইন্টারনেট থেকে  জেনে পরিচিত মিস্ত্রি দিয়ে এডজাস্ট করিয়ে নিতে হবে।


*ভাল্বের গ্যাপ সঠিক না রেখে ট্যাপেট মিলানোর সমস্যা :


১. নির্দেশনার চেয়ে ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স কম ( ট্যাপেট টাইট) রাখলে :


মিস্ত্রিরা এই ভুল সবচেয়ে বেশি করে থাকে খালি হাতে ট্যাপেট এডজাস্ট করতে গেলে। তারা প্রায় সময় দেখা যায়, মোটর সাইকেল একটু বেশি কিমি. চলা হলে আউটলেট গ্যাপ কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ আউটলেট ট্যাপেট টাইট করে ফেলে। এমনও চোখে পড়েছে, আউটলেট ভাল্ব প্রায় ফুল টাইট রেখেছে।


টাইট ট্যাপেট এর সমস্যার শেষ নেই।

যেমন -

----> বাইকের থ্রটল রেস্পন্স গম্ভীর হয়ে যাবে এবং ভার ভার লাগবে। স্পিড উঠতে চাবে না। মনে হবে- ইঞ্জিন যেন শক্তি পাচ্ছে না। ইঞ্জিনের ফ্রি ফ্রি ভাব থাকবে না। তাই মাইলেজ, টপ স্পিড অনেক কমে যাবে। এক্সিলারেসন কমে যাবে। 

----> আইডল আরপিএম (১০০০-১২০০) এবং ক্লাচ লিভার এডজাস্টমেন্ট অপটিমাল রাখা সত্বেও এবং বাইক রানিং অবস্থায় ক্লাচ চাপলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে প্রায় সময় । আরপিএম ১৩০০-১৪০০ রাখলেও অনেক সময় সমাধান হয় নাহ।

 

----> ইঞ্জিন যখন অনেকক্ষণ চলবে, তখন স্বাভাবিকভাবে ভাল্ব অত্যন্ত গরম হবে। কিন্তু ভাল্ব তার দৈর্ঘ্য লম্বা হওয়ার জন্যে পর্যাপ্ত গ্যাপ না পাওয়ার কারণে কম্প্রেসন স্ট্রোকে ভাল্ব খুব খুব সামান্য পরিমান ওপেন হবে। তাই কম্প্রেসন ফল্‌ করবে। তাই একটানা অনেকক্ষণ চালালে ইঞ্জিন ধাক্কাবে, হুট হাট থ্রটল ছেড়ে দিবে। হাই আরপিএম এ প্রচুর ভাইব্রেশন সহকারে বাইক হাল্কা ধাক্কাবে।

 

----> টাইমিং চেইন সাউন্ড বেড়ে যাবে এবং স্থায়িত্ব কমে যাবে। এর কারণ ক্যাম টাইট হয়ে যাওয় টাইমিং চেইনের উপর অনেক চাপ পড়ে ক্যাম ঘুরাতে।

 

----> কারবুরেটর গরম অবস্থায় পারফেক্টলি টিউনিং করে আইডল আরপিএম ১১০০-১৩০০ রাখলেও কোল্ড স্টার্টে আরপিম প্রায় ৭০০-৮০০ তে নেমে যাবে। তাই অস্বাভাবিক সমস্যা করবে কোল্ড স্টার্ট দিতে। স্টার্ট ধরবে, কিন্তু থ্রটল ভালভাবে না দিলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে ইঞ্জিন (২-৩ মিনিট গরম না হওয়া পর্যন্ত)। আবার ঠাণ্ডা অবস্থায় আইডল আরপিএম ১০০০ রাখলে ইঞ্জিন গরম হলে অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়ে ১৫০০-১৬০০ হয়ে যাবে।

 

---->ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হবে।

 

* ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স যদি নির্দেশিত থেকে বেশি হয় অর্থাৎ ট্যাপেট যদি লুজ রাখা হয় :

 

----> ইঞ্জিন হেড  থেকে টিক টিক শব্দ নির্গত হবে। একে ট্যাপেট সাউন্ড বলে। এই সাউন্ড ঠাণ্ডা ইঞ্জিনে পরিষ্কার শোনা যায়। ইঞ্জিন গরম হলে ঠাণ্ডা অবস্থার চেয়েও একটু কম শোনা যায়। কারণ ইঞ্জিন গরম হলে ভাল্ব লম্বা হয়ে ভাল্ব গ্যাপ কিছুটা কমে যায়। ম্যানুয়াল নির্দেশনা থেকে অনেক বেশি গ্যাপ এর কারণে রকার আর্ম ভাল্বকে আঘাত করার জন্যে এই সাউন্ড হবে। ধরুন, আপনি একটা নির্দিষ্ট শক্তিতে হাতুড়ি দিয়ে ৫মিমি. গ্যাপ এ আঘাত করছে একটি ধাতুর উপর। সাউন্ড আসবে, কিন্তু অল্প । যা খুব কম শোনা যাবে। যদি একই শক্তিতে ১৫ মিমি গ্যাপে একই জায়গায় আঘাত করেন, তাহলে শব্দ বেশি শোনা যাবে। ঠিক এই কারণে নির্দেশিত থেকে ভাল্ব গ্যাপ বেড়ে গেলে শব্দ বেড়ে যায়। বিশেষ করে- আউটলেট ভাল্ব গ্যাপ বেশি হয়ে গেলে শব্দ শোনা যায়।

---> ইনলেট ভাল্ব গ্যাপ বেড়ে গেলে ইঞ্জিনের ৪ স্ট্রোক সাইকেলের ইন‌টেক ভাল্ব যতটুকু ওপেন থাকা দরকার, ততটুকু ওপেন থাকতে পারে না। তাই পরিমাণ মতো ফুয়েল-এয়ার মিক্সার সিলিন্ডারে ঢুকতে পারে না। তাই ইঞ্জিনের শক্তি, টপ স্পিড, মাইলেজ, এক্সিলারেশন কমে যায়।

---> কোল্ড স্টার্টে অনেক সমস্যা করে। চোক ধরা ছাড়া স্টার্ট-ই নিতে চায় না।


(চলবে...................)


-----


সাহেদ আহসান আবীর

টেকনিক্যাল ডিরেক্টর

Free Wheelers Club BD Ltd.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ