Header Ads Widget

Responsive Advertisement

টায়ার জেল নিয়ে অজ্ঞতা, কুসংস্কার : কতটুকু ছিদ্রে কাজ করবে, কতদিন পর কীভাবে বুঝব বদলানো উচিৎ (পর্ব ০২)

টায়ার জেল দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে টায়ার জেল খুব পরিচিত, বহুল ব্যবহৃত এবং সহজপ্রাপ্য একটি তরল পদার্থ। যা টিউবলেস টায়ারের ভেতরে দেয়া হয়। কিছুর আঘাতে ছিদ্র হয়ে টায়ার থেকে বাতাস বের হওয়া সেকেন্ডের মধ্যে আটকায় এই টায়ার জেল।

বাংলাদেশে টায়ার জেল খুব পরিচিত, বহুল ব্যবহৃত এবং সহজপ্রাপ্য একটি পদার্থ হলেও এ নিয়ে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ইত্যাদির বাম্পার ফলন দেখা যায়। অভিজ্ঞাতার আলোকে এসব নিয়ে পুরোপুরি লিখার নিয়্যৎ করেছি। একবারে এসব লিখতে গেলে বিশাল উপন্যাস হয়ে যাবে।

তাই চার পর্বে ভাগ করেছি টায়ার জেল নিয়ে পূর্ণাঙ্গ লিখাটি।

সবলেখা মিলিয়ে জানানোর চেষ্টা করব- টায়ার জেলে কী থাকে; বৈশিষ্ট কী; কী পরিমাণে ব্যবহার করা উচিৎ; ছিদ্রের আকৃতি কতটুকু হলে জেল কাজ ঠিকঠাকভাবে কাজ করে, কতদিন পর কীভাবে বুঝব বদলানো উচিৎ; কমবেশি দিলে কী লাভ-ক্ষতি; জেল দিলে টায়ার নষ্ট হবার আশঙ্কা কতটুকু, জেল দিলে বাহনের ব্যালেন্সে কোনো সমস্যা হয় কি-না, জেল ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা, নকল টায়ার জেলে যেসব ক্ষতির আশঙ্কা ইত্যাদি।

এবার পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে থাকছে- ছিদ্রের আকৃতি কতটুকু হলে জেল কাজ ঠিকঠাকভাবে কাজ করে, কতদিন পর কীভাবে বুঝব বদলানো উচিৎ


শুরু করছি আসল কথা। টায়ার জেল টিউবলেস টায়ারের ছিদ্র বন্ধ করে বাতাস বের হওয়া আটকায়। কিন্তু স্বভাবতই প্রশ্ন আসে- কী পরিমাণ আকার আকৃতির ছিদ্র হলে টায়ার জেল ক্ষমতাটা দেখাতে পারে?

এই সম্পর্কে প্রতিটি টায়ার জেল ব্র্যান্ডের বোতল বা ক্যানের গায়ে স্পষ্টভাবে লিখা থাকে। যেমন বিদেশি ব্র্যান্ড মিশেল ও ফ্লেমিংগোর বোতলের গায়ে লিখা আছে- ছিদ্রের আকৃতি যদি সর্বোচ্চ ৬ মিলিমিটার হয়, তাহলে টায়ার জেল সেকেন্ডের মধ্যে ছিদ্র বন্ধ করে দেবার ক্ষমতা রাখে। শতকরা ৯৯ভাগ ব্র্যান্ডের টায়ার জেলের বোতলে একই পরিমাপ লিখা দেখেছি।

এখন দেখা গেল- কারও মোটর বাইক বা চার চাকার টিউবলেস টায়ার এমনভাবে ছিদ্র হলো, যা ৬ মিমি. থেকে বড়, তাহলে টায়ার জেল হাওয়া বেরিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারবে না। এই তথ্যটি যদি সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালক-মালিক না জানেন, তাহলে ঢালাওভাবে বলে দিবেন- টায়ার জেল কাজ করে না/ টায়ার জেল অযথাই/ টায়ার জেল দেয়া মানে আর্থিক ক্ষতি ইত্যাদি।

আবার দেখা গেল, টিউবলেস টায়ারে ব্যবহার করা টায়ার জেলের মেয়াদ নেই অথবা টায়ারের ভেতরে টায়ার জেল থাকতে থাকতে কার্যকারিতা হারিয়েছে- তখন ৬ মিমি. কেন, ৪ মিমি. ছিদ্রও বন্ধ হবে না।

সুতরাং জেল ব্যবহারের পূর্বে বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নেয়া উচিৎ।

এবার বলছি- কতদিন পর কীভাবে বোঝা যায় যে, টায়ার জেল বদলানো উচিৎ?

মিশেল ও ফ্লেমিংগো ব্র্যান্ডের টায়ার জেলের বোতলের গায়ে লিখা তথ্য মতে- এসব টায়ার জেলের সেলফ লাইফ তিন বছর। দেশিয় কিছু ব্র্যান্ডের টায়ার জেলের বোতলে অনুরূপ লেখা দেখা যায়। তবে এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কেননা, বিদেশি জেলগুলোর মান যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেভাবে কী দেশিয় কিছু ব্র্যান্ডের টায়ার জেলের মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে?

এ সন্দেহটা আমার মাঝে বেশ জোরালোভাবে কাজ করে।

যা হোক, ওইসব তথ্যসূত্রে বলা যাচ্ছে, টায়ার জেলের সেলফ লাইফ তিন বছর। কিন্তু টায়ার জেল ব্যবহার করা অবস্থায় তিন বছর কী নেয়া সম্ভব?
 
 
আমি মনে করি সম্ভব না। কেননা, তরল পদার্থ টায়ার জেল যখন ব্যবহার হতে থাকে, রাস্তায় টায়ারের ঘর্ষণ ও আশপাশের আবহাওয়া জনিত কারণে টায়ারের ভেতরের তাপ সামান্য বৃদ্ধি পায়। এতে  টায়ার জেল ধীরে ধীরে শুকিয়ে নিঃশেষ হতে থাকে।

যদি টায়ারে কোনো ছিদ্র না হয়, তাহলে একটি জেল একটি টিউবলেস টায়ারে এক বছর যেতে পারে। বাস্তবে আমি এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এমনও হতে পারে, এক বছর আগেই টায়ার জেল শুকিয়ে গেছে।

আর যদি ঘন ঘন ছিদ্র হয়, তাহলে ৬মাসও যায় কিনা, সন্দেহ আছে। কোনো ব্র্যান্ড দাবি করে, তাদের জেল ৬০ টি, ৫০টি, ৭০টি ছিদ্র বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এসব তথ্য কিন্তু বোতলের গায়েই লিখা থাকে।

আসলে বলা মুশকিল, কখন ছিদ্র হয়েছে, কয়টা হয়েছে, ছিদ্রের আকৃতি কতটুকু ছিল। এত সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ কারও পক্ষেই সম্ভব না।
 
জেল দেবার উদ্দেশে রিম সাবান পানি দিয়ে ধোয়া হচ্ছে।

এসব বিষয় মনে রেখে- জেল দেবার অন্ততঃ ৬ মাস পর পর পরীক্ষা করা উচিৎ জেল আছে কি-না। যদি থাকে তাহলে ভালই, না হলে জেল পরিবর্তন করে ফেলা সর্বোত্তম।

আবার যদি দেখা যায়, ৬ মাসেও জেলের পরিমাণ ঠিকঠাক আছে, তাহলে একবারে ১০ বা ১২ মাসের প্রান্তে পরিবর্তন করে ফেলাই ভাল।

জেল পরিবর্তনের সময় টায়ার রিম থেকে আলাদা করে রিম ও টায়ার ভালভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা উত্তম।
জেল দেবার উদ্দেশে টায়ার সাবান পানি দিয়ে ধোয়া হচ্ছে।


বোঝা গেল তো?

আজকে আর বকবক নয়। টায়ার জেল নিয়ে তৃতীয় পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিলাম। তৃতীয় পর্বে থাকছে- টায়ার জেল কমবেশি দিলে কী লাভ-ক্ষতি; জেল দিলে টায়ার নষ্ট (নতুন টায়ারসহ) হবার আশঙ্কা কতটুকু, জেল দিলে বাহনের ব্যালেন্সে কোনো সমস্যা হয় কি-না।


পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শেয়ার করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সমর্থন করবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ