Header Ads Widget

Responsive Advertisement

টায়ার জেল নিয়ে অজ্ঞতা, কুসংস্কার : জেল কমবেশি দিলে লাভ-ক্ষতি; টায়ার নষ্টের আশঙ্কা, ব্যালেন্সে সমস্যা হয় কি-না (পর্ব ০৩)


বাংলাদেশে টায়ার জেল খুব পরিচিত, বহুল ব্যবহৃত এবং সহজপ্রাপ্য একটি তরল পদার্থ। যা টিউবলেস টায়ারের ভেতরে দেয়া হয়। কিছুর আঘাতে ছিদ্র হয়ে টায়ার থেকে বাতাস বের হওয়া সেকেন্ডের মধ্যে আটকায় এই টায়ার জেল।

বাংলাদেশে টায়ার জেল খুব পরিচিত, বহুল ব্যবহৃত এবং সহজপ্রাপ্য একটি পদার্থ হলেও এ নিয়ে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ইত্যাদির বাম্পার ফলন দেখা যায়। অভিজ্ঞাতার আলোকে এসব নিয়ে পুরোপুরি লিখার নিয়্যৎ করেছি। একবারে এসব লিখতে গেলে বিশাল উপন্যাস হয়ে যাবে।

তাই চার পর্বে ভাগ করেছি টায়ার জেল নিয়ে পূর্ণাঙ্গ লিখাটি।

সবলেখা মিলিয়ে জানানোর চেষ্টা করব- টায়ার জেলে কী থাকে; বৈশিষ্ট কী; কী পরিমাণে ব্যবহার করা উচিৎ; ছিদ্রের আকৃতি কতটুকু হলে জেল কাজ ঠিকঠাকভাবে কাজ করে, কতদিন পর কীভাবে বুঝব বদলানো উচিৎ; কমবেশি দিলে কী লাভ-ক্ষতি; জেল দিলে টায়ার নষ্ট হবার আশঙ্কা কতটুকু, জেল দিলে বাহনের ব্যালেন্সে কোনো সমস্যা হয় কি-না, জেল ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা, নকল টায়ার জেলে যেসব ক্ষতির আশঙ্কা ইত্যাদি।

এবার পড়ুন তৃতীয় পর্ব। এই পর্বে থাকছে- টায়ার জেল কমবেশি দিলে কী লাভ-ক্ষতি; জেল দিলে টায়ার নষ্ট হবার আশঙ্কা কতটুকু, টায়ার জেল দিলে বাহনের ব্যালেন্সে কোনো সমস্যা হয় কি-না- সম্পর্কে।




টায়ার জেল কমবেশি দিলে কী লাভ-ক্ষতি: এই পয়েন্টের কথা ভালভাবে বুঝতে হলে প্রথম পর্ব পড়ে নিন। সেখানে কিছু রেফারেন্সের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে- বাই সাইকেল থেকে শুরু করে বড় যানবাহনের টিউবলেস টায়ারে কী পরিমাণে টায়ার জেল দিতে হবে।

আলোচনার স্বার্থে অল্প কথায় এখানে বলছি- ৩৫০ থেকে ৫০০ মিলি. দিতে হবে মোটর সাইকেলের একটি টিউবলেস টায়ারে।

এখন কেউ যদি মনে করেন- ৩৫০ মিলি. এর কম ব্যবহার করবেন, করতে পারেন। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে টায়ার জেল দেয়া হচ্ছে- সেই প্রত্যাশার জায়গায় ঠিকই বড় ধরণের ঘাটতি সৃষ্টি হয়ে যাবে। জেল দ্রুত পরিবর্তনের সময় ঘনিয়ে আসবে নিশ্চিত। টায়ার ঘন ঘন পাংচার হলে তো দ্রুত পরিবর্তনের সময় আরও দ্রুত পরিবর্তনে রূপ নেবে। এছাড়া আর কোনো ক্ষতি নেই। তবে কোনো লাভ কিন্তু নেই।

আবার কেউ যদি মনে করেন- ৫০০ মিলি. পরিমাণের বেশি দেবেন, সেখানেও সমস্যা আছে। যেমন- টায়ারে অতিরিক্ত ওজন দিয়ে ভার করে ফেলা। এতে মোটর সাইকেলের স্বাভাবিক পারফরম্যান্স বিঘ্নিত হয়ে পড়বে। এতে শুধুই ক্ষতি আছে। কোনো লাভ নেই।

কোম্পানি বহু ঘাঁটাঘাঁটি করে নির্ধারণ করেছে, সর্বোচ্চ পরিমাণ ৫০০ মিলি.। এটা নিশ্চই সত্য- উৎপাদনকারীরা আমাদের চেয়ে একটু বেশি জ্ঞানী।

টায়ার জেল দিলে বাহনের ব্যালেন্সে কোনো সমস্যা হয় কি-না: এক শ্রেণীর ব্যবহারকারী এই কথা খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে বেড়ান যে, টায়ার জেল দিলে মোটর সাইকেলের চাকার ওজন বাড়ে, এটা মোটর সাইকেলের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

কিন্তু আসলে কী তাই?

বিভিন্ন টায়ার জেল উৎপাদকের পরামর্শ অনুযায়ী- মোটর সাইকেলের প্রতি টায়ারে ৩৫০ মিলি. থেকে ৫০০ মিলি. পর্যন্ত টায়ার জেল ব্যবহার করা হয়, তাহলে কী টায়ারের ওজন বাড়ে?

হ্যাঁ, অবশ্যই বাড়ে। এটা একদমই সত্য। এটা এতো ব্যখ্যা করে বোঝানোর দরকার নেই।

কিন্তু জেল দেয়া টায়ার যখন গতি লাভ করে অর্থাৎ যখন ঘুরতে থাকে, তখন কী ওই বাড়তি ওজন থেকে যায়? এটাই হচ্ছে বোঝার জায়গা।

যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা বিষয়টি খুব ভালভাবে বুঝে যাবেন যে, এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চাইছি।

কোনো বস্তু যখন গতি লাভ করে, তখন তার ওজন হ্রাস পায়। সংক্ষেপে বললাম।

একইভাবে টায়ার জেল থাকা টায়ার যখন ঘুরতে শুরু করে তখন জেল দেয়ার ফলে যে ওজন যোগ হয় টায়ারে, সে ওজন হ্রাস পায়। এমন তো নয় যে, টায়ার জেল বরফের মতন জমে থাকে টায়ারের ভেতরে বা দইয়ের মতন অর্ধজমাট স্টাইলে আস্তে আস্তে ঘুরতে থাকে টায়ারের ভেতরে।

প্রথম পর্বে বলেছিলাম, টায়ার জেল জমাট বাঁধতে পারে না। জেল ভর্তি টায়ার যখন ঘুরতে থাকে, তখন জেলও ঘুরতে থাকে। ঘূর্ণয়ন থেমে গেলে জেলও থেমে যায়। কিন্তু জমাট বাঁধে না। পুনরায় টায়ারের ঘূর্ণয়ন শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে জেলও ঘুরতে শুরু করবে।

তাহলে যারা প্রচার করে বেড়ান, টায়ার জেল দিলে মোটর সাইকেলের ওজন বেড়ে ভারসাম্য নষ্ট হয়, তারা কী ঠিক বলেন? নিশ্চই তাদের কথা সঠিক নয়। ব্যখ্যা উপরেই করে দিয়েছি।

তবে যারা পরিমাণের বেশি টায়ার জেল ব্যবহার করেন, তাদের কথা আলাদা। তাদের ক্ষেত্রে ভারসাম্যজনিত সমস্যা ঠিকই আসবে।

একটি কোম্পানি যখন টায়ার জেল বানায়, তা বাজারে ছাড়ার পূর্বে অবশ্যই সেসব কোম্পানি গবেষণা করে নির্ধারণ করে জানিয়ে দেন, কী পরিমাণে টায়ার জেল দিতে হবে এক একটি টায়ারে।

আমি বিদেশি জেল কোম্পানিগুলোর কথা বলছি। দেশি ব্র্যান্ডগুলোর ব্যাপারে আমি অতটা অবগত নই যে, তারা বিদেশি কোম্পানিগুলোর মতন অতো অতো রিসার্চ করে বাজারজাত করণে নামেন কি-না।

কোম্পানি বলে- মোটর সাইকেলের একটি টিউবলেস টায়ারে ৩৫০মিলি. থেকে ৫০০ মিলি. পর্যন্ত টায়ার জেল দিতে।

এখন কেউ যদি ৫০০ মিলি. এর বেশি দেন ও মোটর সাইকেলের ভারসাম্য নষ্ট করেন, সেই দায় সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর উপরই বর্তাবে।

টায়ারজেল দিলে টায়ার নষ্ট হবার আশঙ্কা কতটুকু: একশ্রেণীর মানুষ খুব খুব প্রচার করে বেড়ান যে, টায়ার জেল টায়ার ক্ষয় করে, টায়ারের মেয়াদ কমিয়ে ফেলে। যুক্তি দেখান- টায়ার জেল রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি, এসিড বা স্পিরিট টাইপের কিছু একটা থাকে, না  হলে টায়ারের ছিদ্র তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে কীভাবে?

এসব কথা শুনলে আমার মারাত্মক হাসি পায়।

টায়ারজেল নিয়ে লিখা প্রথম পর্বে বলেছিলামটায়ারজেল প্রস্তুত করা হয়- জৈব পলিমার উপকরণ দিয়ে। জৈব পলিমার উপকরণ দিয়ে প্রস্তুত টায়ারজেল প্রাকৃতিক। এটিকে ধাতু বা রাবার ক্ষয় করার ক্ষমতা দেয়া হয় না।

তাহলে তারা কীভাবে বলেন যে, টায়ার জেল দিলে টায়ার ক্ষয় হয়ে যায় বা টায়ারের মেয়াদ কমে যায়?

কেউ যদি এমন কোনো প্রমাণ পান, তাহলে অবশ্যই দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট টায়ার জেল আসল নাকি নকল।

আবার কেউ কেউ বলে বেড়ান, নতুন টায়ারে জেল দেয়া একদম ঠিক না। দিলে টায়ার নষ্ট হয়। অথচ এ সংক্রান্ত কোনো ব্যবহারিক বা তথ্যভিত্তিক প্রমাণ তাদের কাছে পাওয়া যায় না। সুতরাং এ ধরণের মনগড়া তত্ব ভিত্তিহীন।

হ্যাঁ, আশা করি তৃতীয় পর্বের বিষয়বস্তু সম্পর্কে লিখাটি পূর্ণভাবে বোঝাতে পেরেছি। এবার চতুর্থ বা শেষ পর্বের পালা। চতুর্থ পর্বে লেখব- টায়ার জেল ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা, নকল টায়ার জেলে যেসব ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে।


পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শেয়ার করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সমর্থন করবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Thanks For Comment.