বাংলাদেশের বাজারে দুই ধরণের মোটর সাইকেল বিক্রি করা হচ্ছে। একটি অফিসিয়াল, অপরটি আন অফিসিয়াল। কিন্তু প্রচুর সংখ্যক ক্রেতার মনে প্রশ্ন আছে আন-অফিসিয়াল মোটর সাইকেল নিয়ে। সন্দেহবশতঃ প্রশ্ন করা হয়- আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশন করা যাবে?, এগুলো কী অবৈধ, এগুলোর ইঞ্জিন বিদেশে ব্যবহার হয়ে আসে বাংলাদেশে? এসবের ভাল পার্টস খুলে নকল বা নিম্নমানের পার্টস লাগিয়ে বিক্রি করা হয়?- ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজকের পোস্টে কথা হবে এসব নিয়ে। তার আগে জানতে হবে, অফিসিয়াল এবং আন-অফিসিয়াল মোটর সাইকেল কী?
হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ইন্দোনেশিয়ান ২০২১ মডেল এবিএস আনঅফিসিয়ালি বিক্রির মূহুর্ত |
অফিসিয়াল এবং আন-অফিসিয়াল মোটর সাইকেল কী : অফিসিয়াল মোটর সাইকেল হচ্ছে সেসব মোটর সাইকেল, যেসব মোটর সাইকেলের ব্র্যান্ডের পরিবেশক নিয়োগ দেয়া হয়, সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের সদর দপ্তর বা আঞ্চলিক দপ্তর থেকে। নিয়োগ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সেই ব্র্র্যান্ডের যেসব মোটর সাইকেল বাজারে বিক্রি করবে, সেসবই অফিসিয়াল মোটর সাইকেল।
উদাহরণ হিসেবে দেয়া যায়- ইয়ামাহা মোটর সাইকেল বাংলাদেশে অফিসিয়ালভাবে পরিবেশন করে এসিআই মটরস, হিরো করে নিলয় মটরস ইত্যাদি।
কিন্তু আন-অফিসিয়াল মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের সদর দপ্তর বা আঞ্চলিক দপ্তর থেকে বিক্রেতা বা আমদানিকারককে অনুমোদন আনার দরকার পড়ে না। বিক্রেতা তার মনমতন বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে যে কোনো ব্র্যান্ড সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করতে পারেন।
অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল মোটর সাইকেলের পার্থক্য : এ নিয়ে বাংলাদেশে বহু বিতর্ক আছে। তবে আমি আমার পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু বলার চেষ্টা করব।
ইতোমধ্যে একটি পার্থক্য বলা হয়ে গেছে- ‘অফিসিয়াল এবং আন-অফিসিয়াল মোটর সাইকেল কী?’ পয়েন্টে।
অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল মোটর সাইকেলের প্রথম পার্থক্য ইঞ্জিন ওয়ারেন্টিতে। অফিসিয়াল মোটর সাইকেলে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের পরিবেশক নির্দিষ্ট মেয়াদে ইঞ্জিন ওয়ারেন্টি প্রদান করে থাকে। এটা আনঅফিসিয়ালে একেবারে নেই।
দ্বীতিয় পার্থক্য হচ্ছে- অফিসিয়ালে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড একটি সার্ভিস বই প্রদান করেন, যার মাধ্যমে কিছু ফ্রি সার্ভিসিং পাওয়া যায়। এটি আনঅফিসিয়ালে নেই।
তৃতীয় পার্থক্য বৈশিষ্টগত দিক নিয়ে। এখন উদাহরণে না গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে না।
অফিসিয়ালি বিক্রি করা হচ্ছে ইয়ামাহা ফেজার ভার্সন ২ এফআই মোটর সাইকেল |
যেমন হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০২১ ইন্দোনেশিয়ান এবিএস সংস্করণ অফিসিয়ালভাবে যেটা বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে, সেটার সামনের ইন্ডিকেটর লাইটের অবস্থান এবং আনঅফিসিয়ালের সামনের দিকের ইন্ডিকেটর লাইটের অবস্থান সর্ম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া ইয়ামাহা আর১৫ ভার্সন থ্রিতে তাকালে দেখা যায়- অফিসিয়ালভাবে এটি পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় বিএস ৪ সংস্করণ। অন্যদিকে, আনঅফিসিয়ালি পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় বিএস ৬ সংস্করণ, ইন্দোনেশিয়ান, থাইল্যান্ডের। এসবের সাথে অফিসিয়াল ভারতীয় বিএস ৪ এর বৈশিষ্টে অনেক পার্থক্য দৃশ্যমান। যেমন গ্রাফিক্স, ব্রেকিং ফিচার, সাসপেনশন, ইঞ্জিন পাওয়ার, ফিটিংস ইত্যাদিতে।
অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল মোটর সাইকেলের চতুর্থ পার্থক্য দাম নিয়ে। দেখা যায়, একই সিরিজের মোটর সাইকেল অফিসিয়ালভাবে বিক্রি হচ্ছে যে দামে, সে দামের চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেল। এসব নিয়ে আর বেশি কিছু বলা প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এগুলো খুব সাধারণ ব্যাপার, যা প্রচুর লোকজনই জানেন।
আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেল কী অবৈধ ও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে? : এটি খুব কমন একটি প্রশ্ন। যারা আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেলের সাথে অপরিচিত, তাদেরকেই এই প্রশ্ন করতে দেখা যায়। জেনে রাখা উচিৎ- বাংলাদেশে বহু পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করার নিয়ম আছে। মোটর সাইকেল এর বাইরে নয়। সুতরাং বাংলাদেশে আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেল চাইলে যে কেউ আমদানি করতে পারবেন, যে কোনো দেশ থেকে। শুধুমাত্র সরকারের নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
বাংলাদেশে আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেল যারা আমদানি করে বিক্রি করছেন, তারা সেসব নিয়ম মেনেই স্থলবন্দর বা বিমানবন্দর দিয়ে মোটর সাইকেল প্রবেশ করাচ্ছেন। সবশেষে শোরুমে প্রকাশ্যে উঠিয়ে বিক্রি করছেন। অতএব বলা যায়, আনঅফিসিয়াল মোটর সাইকেলের বৈধতা আছে এবং এর রেজিস্ট্রেশন করবে বিআরটিএ।
আনঅফিসিয়াল মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন বিদেশে ব্যবহার হয়ে আসে ও ভাল পার্টস খুলে নকল বা নিম্নমানের পার্টস লাগিয়ে বিক্রি করা হয়? : এ প্রশ্নগুলোও বেশ শোনা যায়।
প্রথমেই বলে রাখি- দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আন অফিসিয়াল মোটর সাইকেল বিক্রি করা হচ্ছে। মানুষজন কিনছেনও সেইরকম। আজ পর্যন্ত কোনো ক্রেতার কাছ থেকে একটি অভিযোগ বা দাবি আসেনি বা ব্যক্তিগতভাবে আমিও শুনিনি যে, বিদেশে ব্যবহৃত ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে বা ভাল পার্টস খুলে নকল বা নিম্নমানের পার্টস লাগিয়ে বিক্রি করা হয়েছে।
কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ওইসব প্রশ্ন তুলে তা প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তির জালে ফেলে দেন।
তাহলে এখন কী করব? অফিসিয়াল নাকি আন অফিসিয়াল- কোনটা কিনব? এটি নির্ভর করবে সম্পূর্ণ ক্রেতার ইচ্ছার উপর। অফিসিয়াল - আন অফিসিয়াল- কোনোটাই নকল নয়। এরইমধ্যে এসবের পার্থক্যগুলো বর্ণনা করা হয়ে গেছে। এসব পার্থক্য ব্রেনে প্রবেশ করান, ভাবুন, শোরুম ভিজিট করুন, চিন্তা করুন আপনার যা দরকার তা কোনটায় আছে- অফিসিয়ালে নাকি আন অফিসিয়ালে? তারপর সিন্ধান্ত নিন, কিনুন। ব্যস হয়ে গেল।
ব্যস পোস্টও শেষ হয়ে গেল।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শেয়ার করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সমর্থন করবেন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thanks For Comment.