Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ফগ লাইট ব্যবহারে মামলা কেন?


মোটর সাইকেলে ফগ লাইটের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে জনসাধারণের মাঝে। ফগ লাইটের গুরুত্ব অনুধাবন করে কেউ বলেন, “বিষয়টি ছাড় দেয়া উচিৎ। কেননা, দেশে প্রচলিত কোনো মোটর সাইকেলের হেডলাইটের আলো মহাসড়কের জন্য পর্যাপ্ত নয়”। আবার কেউ যুক্তি দেখান- “শীতের সময় মহাসড়কে চলাচল করতে গেলে ফগ লাইট জরুরি”। কেউ একটু জেদবশতঃ বলেন- “পুলিশ অনৈতিকভাবে ফগলাইটের বিরুদ্ধে মামলা দেন। আসলে ফগ লাইটের বিরুদ্ধে মামলা দেবার বিধান নেই। কিন্তু পুলিশ ইচ্ছা করে এটা দিচ্ছে”।

কারও কাছ থেকে যুক্তি আসে- মোটর সাইকেলে ফগ লাইট লাগানো অবস্থায় যখন সেটা জ্বালানো হয় না, তখন মোজা বা কিছু দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখলে পুলিশ দেখলেও মামলা দেয় না। আবার এমন কথাও শোনা যায়- ফগ লাইট লাগানোর অবস্থান যদি সঠিক হয়, অর্থাৎ বিপরীত পাশ থেকে আসা যানবাহন চালকের দৃষ্টি ব্যাঘাত সৃষ্টি করার মতন স্থানে যদি ফগ লাইট লাগানো না হয়, তাহলে পুলিশ মামলা দিবে না।

এছাড়াও ফগলাইট নিয়েই নানা ধরণের মনগড়া অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশের চরিত্রহনন করা হচ্ছে।

দেখা গেছে, এসব মনগড়া নিয়ম মেনেও কেউ কেউ ফগ লাইটের জন্য মামলার শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু আসলে ঘটনা কী? ট্রাফিক পুলিশ একটি আইনের ভিত্তিতে তাদের কার্যাবলি পরিচালনা করেন। তাহলে শুধুমাত্র মোটর সাইকেলে ফগ লাইটের ব্যবহার নিয়ে পুলিশ সেই আইন অমান্য করেন? বিষয়টি কী?

আজকের পোস্টে এসব বিষয়ে চলবে বিস্তারিত আলোচনা। এই আলোচনা চলবে সম্পূর্ণ আইনের ভিত্তিতে।

সবার আগে আমাদের জানতে হবে সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ এর ৪০ ধারার ৩, ৪ ও ৫ উপধারা সম্পর্কে। সেখানে বলা আছে-


“মোটরযানের
নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস রক্ষণাবেক্ষণ” শিরোনামে রচিত ৪০ ধারার ৩ উপধারায় বলা আছে-

কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কারিগরি বিনির্দেশের (technical specification) ব্যত্যয় ঘটাইয়া কোনো মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আসন বিন্যাস, হুইল বেইজ, রিয়ার ওভার হ্যাংগ, ফ্রন্ট ওভার হ্যাংগ, সাইড ওভার হ্যাংগ, চাকার আকৃতি, প্রকৃতি অবস্থা, ব্রেক স্টিয়ারিং গিয়ার, হর্ন, সেফটি গ্লাস, সংকেত প্রদানের লাইট রিফ্লেক্টর, স্পিড গভর্নর, ধোঁয়া নির্গমণ ব্যবস্থা কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ, শব্দ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বা সমজাতীয় অন্য কোনো কিছু পরিবর্তন করা যাইবে না”।

৪০ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে-

“রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের কোনো কারিগরি, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে”।

৪০ ধারার ৫ উপধারায় বলা আছে-

“সরকার বা, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কর্তৃপক্ষ, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিশেষ ধরনের মোটরযানের রং নির্ধারণ করিতে পারিবে এবং উক্তরূপ নির্ধারিত রং সরকার বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত পরিবর্তন করা যাইবে না”।

একটু লক্ষ্য করলে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে- ৪০ এর ৩ উপধারা অনুযায়ী- মোটরযানে এমন কোনোকিছু সংযোজন করা যাবে না, যা যানবাহন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হয়নি। এর আওতায় পড়ে যাচ্ছে ফগ লাইটও। কেননা, কোনো মোটর সাইকেল কোম্পানি তাদের কোনো মোটর সাইকেলে ফগলাইট সংযোজন করে দেন না।

৪০ ধারার ৪ উপধারা লক্ষ্য করলে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে- রেজিস্ট্রেশন করা সংশ্লিষ্ট মোটরযানের কোনো কারিগরি, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনুমতি নিতে হবে।

ফগলাইট ব্যবহার করতে হলেও এই অনুমতি গ্রহণ প্রয়োজন।

এই ধারাটিও শুধুমাত্র মোটর সাইকেলের জন্য নয়, একইসাথে সব ধরণের মোটর যানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- ৪০ এর ৪, ৫, ৬- এর কোথাও ফগলাইট কথাটি উল্লেখ নেই। কিন্তু এটাকে যদি কেউ আইনের ফাঁকফোঁকর মনে করেন, তাহলে ভুল হবে। বিষয়টি হচ্ছে- সংযোজন। ফগলাইটের ব্যবহার সংযোজনের আওতায় পড়ে। এজন্য ফগলাইট ব্যবহার করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয়।

এই আইন কিন্তু শুধুমাত্র মোটর সাইকেলের জন্য নয়। মোটর সাইকেলের সাথে যে কোনো মোটর যানের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য।

সবই বুঝলাম, ফগ লাইট ব্যবহার অন্যায়। তাহলে এর শাস্তি কী?


সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ওই ৪০ ধারার ভঙ্গ করলে শাস্তি দেয়া হবে ৮৪ ধারা অনুযায়ী।

এই ধারায় বলা আছে- যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৪০ এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড তবে অন্যূন (এক) বছর, বা অনধিক (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

মানে বুঝলেন- ফগ লাইট যদি ৩ হাজার টাকারও ব্যবহার করেন, এর শাস্তি অনধিক (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড তবে অন্যূন (এক) বছর, বা অনধিক (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ড।

কী ভয়াবহ অবস্থা, তাই না? এই মামলা যদি কোনো মোটর সাইকেল মালিকের একবার হয়, তাহলে অবস্থা কী হতে পারে? আজীবন এই মামলার কথা মনে থাকবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এলাকায় পুলিশ কমিশনার প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী- এই অপরাধের জন্য প্রথমবার ১৫ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় বার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

এটাও কিন্তু বিশাল। মাথা নষ্ট হবার মতন দশা।

আশার কথা আমাদের ট্রাফিক পুলিশ- ফগলাইটের বিষয়টিকে সদয় দৃষ্টিতে দেখেন। এজন্য মামলা হতে খুব একটা দেখা যায় না। হঠাৎ হঠাৎ শোনা যায়- অমুক ফগ লাইটের মামলা খেয়েছেন ইত্যাদি।

যদি কোনো ট্রাফিক সার্জেন্ট ফগ লাইটের জন্য কোনো মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়-ও, সেখানে তারা রেকার বিল ধার্য করে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা জরিমানা নেন।


চিন্তা করুন- যদি ডিএমপি কমিশনারের কথা পুরো পালন করা হতো, তাহলে প্রথমবার ১৫ হাজার এবং একই ব্যক্তি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে মামলা হতো ৩০ হাজার টাকার।

এই যে বললাম- আশার কথা আমাদের ট্রাফিক পুলিশ- ফগলাইটের বিষয়টিকে সদয় দৃষ্টিতে দেখেন। এজন্য মামলা হতে খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু কোনো ট্রাফিক পুলিশ যদি ফগলাইটের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেন, তাহলে সেটাকে কোনোভাবেই অবৈধ কর্মকাণ্ড হিসেবে দাবি করা যাবে না।


কেননা, আইনে বলা আছে, ফগ লাইট ব্যবহারের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া যায়। ফগ লাইট মোটর সাইকেলের উপরে লাগালে/নিচে লাগালে/লুকিয়ে রাখলে/মোজা দিয়ে ঢেকে রাখলে পুলিশ মামলা দিবে না- এমন মনগড়া যুক্তি খাটবে না।

আশা করি- ফগ লাইটের বিষয়ে আইনগত দিক নিয়ে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন।


পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শেয়ার করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সমর্থন করবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ